শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০

ষোড়শ মহাজনপদ


ষোড়শ মহাজনপদ




খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতবর্ষে কোন রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না । এই সময় বিশেষত উত্তর ভারতে
কয়েকটি শক্তিশালী রাজ্য গড়ে ওঠে ।



বৌদ্ধ গ্রন্থ "অঙ্গুত্তর নিকায়" এবং জৈন গ্রন্থ "ভগবতী সূত্রে" এই রাজ্যগুলিকে

মহাজনপদ বলা হয়েছে । কাবুল থেকে গোদাবরী নদীর তীর পর্যন্ত মোট 16 টি আঞ্চলিক রাজ্য এর

অস্তিত্বের কথা জানা যায় । এই 16 টি রাজ্যই মহাজনপদ নামে পরিচিত । এগুলি হলো -






  • এই রাজ্যগুলির মধ্যে মগধ ক্রমে শক্তিশালী সাম্রাজ্য পরিণত  হয
  • বৃজি ও মল্ল এই দুটি মহাজনপদ ছিল প্রজাতান্ত্রিক রাজ্য এবং বাকি গুলি ছিল রাজতন্ত্র
  • গান্ধার ও কম্বোজ এই দুটি জনপদ বর্তমানে ভারতের বাইরে অবস্থিত
  • ষোড়শ মহাজনপদ এর মধ্যে শক্তিশালী রাজ্য  বা জনপদ ছিল মগধ  কৌশল অবন্তী ও বৎস ।
কম্বোজ

প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে কম্বোজ কে সাধারণত গান্ধারের প্রতিবেশী রাজ্য রূপে উল্লেখ করা হয়েছে 

বৈদিক যুগ উত্তর  ভারতে কম্বজ ব্রাহ্মণ্য ধর্ম সংক্রান্ত শিক্ষার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল 

কম্বোজ এর রাজধানী ছিল রাজপুর  প্রথমে কম্বজ রাজতন্ত্র ছিলকিন্তু পরবর্তীকালে রাজতন্ত্রের স্থলে

কৃষক পশুপালক ব্যবসায়ী  সৈনিক প্রভৃতি বিভিন্ন  বৃত্তি ধারীদের এক সমবায় বা সংঘ স্থাপিত হয় 



গান্ধার

পাকিস্তানের পেশোয়ার রাওয়ালপিন্ডি অঞ্চলে গান্ধার রাজ্য গড়ে ওঠে  গান্ধারের রাজধানী তক্ষশীলা 

শুধু রাজনৈতিক কারণে নয় সাংস্কৃতিক  বাণিজ্যের কেন্দ্ররূপেও শহরটির অসামান্য খ্যাতি ছিল 

গান্ধার রাজ্যের রাজা ছিলেন পুক্কসাতি  তিনি মগরাজ বিম্বিসারের নিকট দূত প্রেরণ করেছিলেন 

পারস্য সম্রাট দরায়ুসের বেহিস্তান  লিপিতে গান্ধার রাজ্যটিকে  পারস্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বলে

বর্ণনা করা হয়েছে 



শূরসেন

মথুরা  পার্শ্ববর্তী অঞ্চল নিয়ে ছিল শূরসেন রাজ্য  রাজ্যের রাজধানী ছিল মথুরা 

যদু বা যাদব বংশ এই স্থানে রাজত্ব করত  বুদ্ধের সময় অবন্তীপুত্র নামে এক রাজা এখানে রাজত্ব

করতেন  তিনি বুদ্ধের ভক্ত ছিলেন  শেষে  অঞ্চলে মগদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় 


পাঞ্চাল

উত্তরপ্রদেশের  বেরিলী বুদাউন ফরাক্কাবাদ অঞ্চলে পাঞ্চাল রাজ্য অবস্থিত ছিল 

ভাগীরথী গঙ্গা নদী রাজ্যটিকে উত্তর পাঞ্চাল  দক্ষিণ পাঞ্চাল এই দুটি প্রদেশে বিভক্ত করেছে 

উত্তর পাঞ্চাল এর রাজধানী ছিল   অহিচ্ছত্র  দক্ষিণ পাঞ্চাল অঞ্চলের রাজধানী ছিল কম্পেল 

বৌদ্ধ সাহিত্যে উল্লেখ আছে যে প্রাচীনকালে উত্তর পাঞ্চলের অধিকার নিয়ে কুরুরাজ্য  পাঞ্চাল

রাজ্যের মধ্যে বহুবার সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছিল 

চেদি

গঙ্গার দক্ষিনে এলাহাবাদ এর পশ্চিমে চেদি রাজ্য অবস্থিত  রাজ্যের রাজধানী  ছিল শুক্তিমতি 

ঋকবেদে চেদি অধিবাসীদের উল্লেখ পাওয়া যায়  মৎস  কাশি রাজ্যের সঙ্গে চেদি রাজ্যের ঘনিষ্ঠ

যোগাযোগ ছিল  চেদি থেকে বারানসি পর্যন্ত একটি রাজপথ ছিলকিন্তু এই পথে

যাতায়াত নিরাপদ ছিল না 

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে  রাজ্যটির তেমন কোন রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিলনা 

পরে এটি মগধ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় 


বৎস

বর্তমান এলাহাবাদ অঞ্চলে প্রাচীন বৎস রাজ্য অবস্থিত ছিল  রাজ্যের রাজধানী ছিল কৌশাম্বী 

বৎস রাজপরিবার প্রাচীন কুরুবংশেরই এক শাখা  পুরাণে বলা হয়েছে গঙ্গার প্লাবনে হস্তিনাপুর বিধ্বস্ত

হলে কুরুরাজ নিচক্ষু কৌশাম্বীতে  রাজধানী স্থানান্তরিত করেন  খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে দ্বিতীয়ার্ধে উদয়ন

কৌশাম্বীতে রাজত্ব করতেন  মহাকবি ভাস এর স্বপ্নবাসবদত্তা   প্রতিজ্ঞা যৌগন্ধরায়ন  নাটকে তাকে

ভারত বংশীয় বলা হয়েছে 


মল্ল

মল্ল রাজ্যটি বৃজি  রাষ্ট্রসঙ্ঘের উত্তরে অবস্থিত ছিল  রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে  আবির্ভাব ঘটলেও

পরবর্তীকালে প্রজাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত ছিল  এই রাজ্যটি দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত ছিল এবং

এদের রাজধানী ছিল যথাক্রমে কুসিনারা  পাবা  গৌতম বুদ্ধের সময় মল্ল রাজ্যটি শক্তিশালী হয়ে

 ওঠে  প্রতিবেশী  লিচ্ছবিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকায় মল্ল দের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায় 

বিম্বিসার এর পুত্র অজাতশত্রুর আমলে মল্ল সম্ভবত মগধ রাজ্যের আনুগত্য স্বীকার করে 


 মৎস্য

রাজস্থানের জয়পুর আলোয়ার ভরতপুর অঞ্চলে মৎস্য রাজ্য গড়ে ওঠে মৎস্য রাজ্যের রাজধানী ছিল

বৈরাট ।সাময়িকভাবে মৎস্য রাজ্য চেদিরাজ কর্তৃক অধিকৃত হয়েছিল  অবশেষে  মৎস্যরাজ্য মগধ

সাম্রাজ্যভুক্ত হয়ে গিয়েছিলো  মৎস্য রাজ্যের মধ্যস্থলে পরবর্তীকালে সম্রাট অশোকের শিলালিপি

আবিষ্কৃত হয়েছে 


বৃজি  

গঙ্গা নদীর উত্তরকুল থেকে নেপাল পর্যন্ত বৃজি   রাজ্য বিস্তৃত ছিল  মহাজনপদ গুলির মধ্যে বৃজি  ছিল

একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র  আটটি বা নয়টি গণরাজ্য  নিয়ে বৃজি গঠিত ছিল  এই গন রাজ্যগুলির

মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল ... বিদেহলিচ্ছবিজ্ঞাতৃক  বৃজি   বৃজির রাজধানী ছিল বৈশালী  বৌদ্ধ

সাহিত্যে বৈশালীর সমৃদ্ধির কথা উল্লেখ আছে  বৈশালী ছিল সমকালীন ভারতের শ্রেষ্ঠ নগরী  গৌতম

বুদ্ধ তাঁর শিষ্য আনন্দ কে বলেছিলেন যতদিন পর্যন্ত লিচ্ছবি তাদের গণতান্ত্রিক  ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখবে

এবং সংঘবদ্ধভাবে থাকবে ততদিন অজাত শত্রু কেন কোনো পরাক্রান্ত রাজাই তাদের স্বাধীনতা হরণ

করতে পারবে না  কিন্তু ঐক্যের অভাবে শেষ পর্যন্ত অজাতশত্রুর কাছে তাদের হার মানতে হয় 


 কুরু

দিল্লি  তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল নিয়ে কুরু  রাজ্য গঠিত  কুরু রাজ্যের রাজধানী ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ 

পালি গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে কুরু  রাজ্যে যুধিষ্ঠিরএর বংশধরগণ রাজত্ব করতেন 

বুদ্ধের সময় রাজ্যটির রাজনৈতিক গৌরব আর কিছু অবশিষ্ট ছিল না 


অবন্তী

মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী  বিদিশা অঞ্চল কে কেন্দ্র করে অবন্তী রাজ্যের প্রতিষ্ঠিত হয় 

অবন্তীর রাজধানী ছিল   উজ্জয়িনী  বিন্ধ পর্বত এই জনপদকে দু'ভাগে বিভক্ত করে রেখেছিল 

উত্তরাংশ এর প্রধান নদী ছিল শিপ্রা এবং রাজধানী উজ্জয়নী  দক্ষিণাংশের প্রধান নদী ছিল নর্মদা এবং

রাজধানী ছিল  মাহিস্বতী বা মাহিম্বতী   পুরানে অবন্তী রাজগন কে  যদুবংশসম্ভূত বলে বর্ণনা করা

হয়েছে 


অঙ্গ     

বর্তমান ভারতের দেওঘর এবং বিহারের মুঙ্গের  ভাগলপুর জেলায় অঙ্গরাজ্য অবস্থিত ছিল 

চম্পা ছিল এর রাজধানী  প্রথমদিকে অঙ্গ খুবই শক্তিশালী ছিল  চম্পা নগরী বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র

ছিল ।গৌতম বুদ্ধের নির্বাণ লাভের কাল পর্যন্ত অঙ্গরাজ্য ভারতবর্ষের  প্রধানত 6 টি রাজ্যের অন্যতম

বলে বিবেচিত হতো 


মগধ

মহাজনপদ গুলির মধ্যে  মগধ কালক্রমে সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং অন্যান্য জনপদগুলোকে

গ্রাস করে এক বিশাল সাম্রাজ্য গঠন করে   বর্তমান পাটনা  এবং গয়া জেলা নিয়ে মগধ রাজ্য গঠিত

ছিল ।গঙ্গা এবং শোন নদীর দ্বারা  পরিবেষ্টিত মগধ রাজ্যের প্রথম রাজধানী ছিল রাজগির

কাছে  গিরিব্রজ ।পরবর্তীকালে রাজগৃহ  পাটলিপুত্রে যথাক্রমে রাজধানী স্থানান্তরিত হয় 

এখানে যে সকল রাজবংশ রাজত্ব করেছিলেন সেগুলির মধ্যে শিশুনাগ বংশ বিশেষ উল্লেখযোগ্য 


কোসল

বর্তমান ভারতের  ফৈজাবাদ অযোধ্যা অঞ্চল নিয়ে প্রাচীন কোসল রাজ্য গঠিত ছিল 

উত্তরে নেপাল থেকে দক্ষিনে সর্পিকা বা সাই নদী এবং পূর্বে গণ্ডক থেকে পশ্চিমে গৌতমি পর্যন্ত

বিস্তৃত  ছিল এই রাজ্যটি  কোশল রাজ্যের রাজধানী ছিল শ্রাবস্তী। কাশি রাজ্য অধিগ্রহণ এর সঙ্গে

সঙ্গে কৌশলের প্রভাব দ্রুত বৃদ্ধি পায়  ষষ্ঠ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত কৌশলের প্রতিপত্তি অক্ষুন্ন ছিল 


কাশী

"শতপথ ব্রাহ্মণ "   "জাতক গ্রন্থেকাশীরাজের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে , প্রথমদিকে ক্ষমতায়

 প্রতিপত্তি তে কাশীরাজের স্থান ছিল সবার ওপরে  কাশি শহরের উত্তর  দক্ষিণ  দুটি নদী

বরুনা এবং অসি প্রবাহিত হয়  তাই এর আরেক নাম বারানসী  কাশীর রাজারা কোশল ,অঙ্গ  মগধ

জয় করেছিলেন বলে প্রমাণ আছে  কিন্তু  কাশীর সৌভাগ্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি বুদ্ধের জন্মের পূর্বে

রাজ্যটি  কোসল  রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।


অস্মক

গোদাবরী নদীর তীরে অস্মক রাজ্য অবস্থিত ছিল ।এর রাজধানী ছিল পোটালি মতান্তরে পোতন বা

পোদন  বায়ু পুরাণ থেকে জানা যায় ইক্ষাকুদের এক শাখা অস্মক  রাজত্ব করতেন 

অস্মক জাতক থেকে জানা যায় যে এককালে অস্মক রাজ্য কাশী  রাজ্যের অধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য


হয়েছিল 

নতুন লেখা

MOC Test Set - 19

Translate