নেপালের কপিলাবস্তুর এক সম্ভ্রান্ত ক্ষত্রিয় শাক্য বংশে বুদ্ধদেবের জন্ম হয়।
ও মা মায়াদেবী। কোন কোন প্রাচীন বৌদ্ধ গ্রন্থের শুদ্ধোধন কে কপিলাবস্তুর
রাজা রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। বুদ্ধের জন্মকালে কপিলাবস্তু স্বাধীন থাকলেও
শুদ্ধোধন সেখানকার একছত্র রাজা ছিল না।
আমাদের facebook Group এ যুক্ত হতে Click করুন ...
গৌতম বুদ্ধের প্রথম জীবন
প্রথম জীবনে বুদ্ধদেব "গৌতম "এবং "সিদ্ধার্থ" নামে পরিচিত ছিলেন। গৌতম
গোত্রে জন্ম হয় তিনি গৌতম। তার জন্মকালে সকলের আশা পূর্ণ হয়েছিল বলে
তিনি সিদ্ধার্থ। বোধি বা সম্যক জ্ঞান লাভের পর তার বুদ্ধ নামকরণ হয়। সত্য
উপলব্ধি করেছিলেন বলে তিনি তথাগত।
গৌতম এর জন্মের সাতদিন পর তার মা মারা যান।
তার মাসি তথা বিমাতা মহাপ্রজাপতি গৌতমী তাকে পুত্রস্নেহে পালন করেন।
ছোটবেলা থেকেই গৌতমের মনে বৈরাগ্য দেখা দেয়। গৌতম যাতে গৃহত্যাগী
না হয় সেই ভয়ে শুদ্ধোধন সংসারের দিকে তার আকর্ষণ বাড়াবার জন্য যথাসময়ে
যশোধারা নামে এক কন্যার সঙ্গে গৌতমের বিবাহ দেন। ক্রমে তার এক পুত্র হয়,
তার নাম। রাহুল কিন্তু সংসারের এই বাঁধন তাকে আটকে রাখতে পারেনি। 29 বছর
বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করেন। বৌদ্ধ সাহিত্যে তাঁর গৃহ ত্যাগের দু'রকম বর্ণনা আছে-
ললিতবিস্তর, বুদ্ধচরিত প্রভৃতি গ্রন্থে বলা হয়েছে রাতের বেলায় আত্মীয়স্বজনদের
অজ্ঞাতে ঘোড়া কন্টকের পিঠে চড়ে সারথী ছন্দকের সঙ্গে তিনি গৃহত্যাগ করেন।
অরিয় পরিয়েসনসুত্তে এক কাহিনীর অবতারণা আছে। এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়
গৌতম তাঁর সন্ন্যাস গ্রহণের সংকল্পের কথা শুদ্ধোধন ও গৌতম কে বলেছিলেন।
কিন্তু তাদের অনুমতি না পেয়ে তিনি একাকী বাড়ি ছেড়ে চলে যান।
গৌতমের গৃহ ত্যাগের ঘটনাকে মহাভিনিষ্ক্রমণ বলে
আমাদের facebook Group এ যুক্ত হতে Click করুন ...
গৌতম থেকে বুদ্ধ
সত্যের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে তিনি এলেন লিচ্ছবি গণ রাজ্যের রাজধানী বৈশালীতে।
সেখানে ঋষি আরাড় কালামের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তিনি যোগ অভ্যাস করেন। কিন্তু
এতে তিনি সন্তুষ্ট না হয়ে পাঁচজন সতীর্থকে নিয়ে পুরো উরুবিল্ব বা বর্তমান বোধহয়
চলে যান। উরুবিল্বে এসে গৌতম কৃচ্ছসাধন শুরু করেন। এ সাধনা চলে দীর্ঘ 6 বছর।
তার গৌরবর্ণ দেহ মলিন হলো, চোখ কোটরাগত হলো, শরীর অস্থিসার হলো, শেষে
একদিন জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন তিনি। অবশেষে তার ধারণা দৃঢ় হলো অনাহারে থেকে
শরীরকে কষ্ট দিয়ে সম্ভোধি জ্ঞান লাভ হয় না। চিত্ত শুদ্ধ হলে শরীরকে কষ্ট না দিয়ে
ও প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা যায়। তিনি জীবন রক্ষার জন্য অন্য গ্রহণ করেন। তার
কাজে অসন্তুষ্ট হয়ে তার পাঁচজন সঙ্গী তাকে ছেড়ে চলে যান। এর কয়েকদিন পর
ফাল্গুন নদীর তীরে এক বট বা অশ্বথ গাছের তলায় তিনি ধ্যানমগ্ন হলেন। তার মনে
দৃঢ় সংকল্প দুর্লভ বোধিলাভ না করে তিনি আসন ছাড়বেন না। অর্থাৎ বুদ্ধত্ব অর্জন না
করে গৌতম তার ধ্যান ভঙ্গ করবেন না।
অবশেষে এক বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে প্রকৃত জ্ঞানের আলোয় তার দেহ-মন উদ্ভাসিত
হলো। তার অন্তরের অজ্ঞান অবিদ্যা নির্বাপিত হল। তিনি নির্বাণ লাভ করলেন। তার
তার বুদ্ধ পরিচয়ের সেইখান থেকেই শুরু। তখন তার বয়স 35 বছর।
বুদ্ধের ধর্ম প্রচার
বুদ্ধ সর্বপ্রথম তার ললিত বাণী প্রচার করেন ঋষিপত্তনে বর্তমান নাম সারনাথ।
শ্রোতারা হলেন তার পাঁচজন প্রাক্তন সতীর্থ। বপ্র, ভদ্রিয়, অশ্বজিত, মহানাম,
কৌন্ডিন্য, এরা প্রত্যেকেই ব্রাহ্মণ ছিলেন। এই ঘটনা " ধর্মচক্র প্রবর্তন" নামে
খ্যাত। বুদ্ধের বাণী তে আকৃষ্ট হয়ে সকলেই তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এই
পাঁচজন শিস্য নিয়ে সারনাথের প্রথম বৌদ্ধ সংঘ গড়ে উঠলো।
বহুজনহিতায়, বহুজনসুখায়, লোকানুকম্পায় তার এই ধর্ম প্রচার। তাই
তিনি ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে স্থান থেকে স্থানান্তরে ঘুরে বেরিয়েছেন। ধর্ম প্রচারের
মাধ্যম রূপে বুদ্ধ লোক ভাষা মাগধী প্রাকৃত কে গ্রহণ করলেন। বৌদ্ধ ধর্মের
জনপ্রিয়তার এটি একটি অন্যতম কারণ। বুদ্ধের দুজন প্রধান শিষ্য ছিলেন
উপালি এবং অভয় রাজকুমার এরা পূর্বে তীর্থঙ্কর মহাবীরের শিষ্য ছিলেন। বুদ্ধ ধর্ম
গ্রহণ করে যারা গৃহ ত্যাগ করে প্রব্রজ্যা নিয়ে সঙ্গে যোগদান করেন তাদেরকে
ভিক্ষু বা শ্রমন বলা হয়। বুদ্ধের প্রব্রজিত শিশুদের সামনের সারিতে ছিলেন শারিপুত্র
মৌদগল্যায়ন, আনন্দ, মহাকাশ্যপ, মহা কাত্যায়ন উপালী। প্রব্রজ্যা গ্রহণ
করে মহিলারা সঙ্গে যোগ দিন বুদ্ধের তা অভিপ্রায় ছিল না কিন্তু আনন্দ ও
মহা প্রজাপতির বিশেষ অনুরোধে তিনি তার মত পরিবর্তন করেন।
বুদ্ধদেবের গৃহী শিষ্যদের মধ্যে বিশেষ প্রসিদ্ধ ছিলেন মগদের রাজা বিম্বিসার,
অজাতশত্রু, রাজবৈদ্য জীবক, শ্রাবস্তীর বণিক অনাথপিন্ডদ, বৈশালী বারবনিতা
অম্রপালি, এবং শ্রাবস্তীর গৃহবধূ বিশাখা।
মহাপরিনির্বাণ
মহাপরিনিব্বান সূত্তে বলা হয়েছে বুদ্ধ কুশিনগর যাওয়ার পথে পাবা শহরে এসে
উপস্থিত হন। সেখানে তিনি কর্মকার চুন্দের অতিথি হন। চুন্দের বাড়িতে শুকরের
মাংস খেয়ে বুদ্ধ অতিসার রোগে আক্রান্ত হয়। অসুস্থ শরীরে তিনি শেষে কুশীনগর
উপস্থিত হন। সেখানেই তার দেহাবসান হয়। তখন তার বয়স ছিল 80 বছর। বুদ্ধের
দেহাবসান পরিনির্বাণ বা মহাপরিনির্বাণ নামে খ্যাত।
বুদ্ধের মহাপ্রয়াণের পর কত শত বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু শান্তি সাম্য
মৈত্রী ও অহিংসার প্রবক্তা এই মহামানব আজও বিশ্ববন্দিত বিশ্ববরেণ্য।
আমাদের facebook Group এ যুক্ত হতে Click করুন ...